৫০ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ খুঁজছেন ? আজকের দিনে ল্যাপটপ বাজারে নানান প্রকারের ল্যাপটপ পাওয়া যায়। আল্ট্রাবুক থেকে শুরু করে শক্তিশালী গেমিং ল্যাপটপও আছে বাজারে। কিন্তু এইসব ল্যাপটপগুলো চওড়া মূল্যে বিক্রি হয়। এবং দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই।
সবার পক্ষে এত দাম দিয়ে ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য থাকে না কিন্তু তারপরও ল্যাপটপ এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কেননা ল্যাপটপ দিয়ে ডেস্কটপ এর সমস্ত কাজ করা যায় তাও আবার ব্যাগে বহন করে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০ হাজার টাকায় ভালো সব ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো দিয়ে সহজেই ব্রাউজিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, ওয়ার্ড প্রসেসিং করতে পারবেন। আবার হালকা পাতলা ১০৮০ পি ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সংকলন করতে চেষ্টা করেছি ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এমন সব ল্যাপটপ যেগুলো আপনি মার্কেটে পেয়ে যাবেন এবং আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজেই করতে পারবেন।
বিঃদ্রঃ আজকের এই আর্টিকেলে উল্লেখিত ল্যাপটপ সমূহ সব সময় সব মার্কেটে নাও থাকতে পারে। এবং এই সকল ল্যাপটপ গুলোতে আপনি প্রফেসনাল ভিডিও এডিটিং, গেমিং এমনকি ফুল এইচডি এর উপরে ভিডিও দেখতে পারবেন। তাই আপনাকে একটু কম্প্রোমাইজ করতে হবে। alert-info
এই ল্যাপটপটি এই বাজেটের সেরা একটি ল্যাপটপ। এতে আছে ১৫.৬-ইঞ্চি এর বড় ডিসপ্লে যেটার রেজোলিউশন ১০৮০পি এবং এটি ২৭৬ নিটস পর্যন্ত ব্রাইট হয় ( এই বাজেটের অন্যান্য ল্যাপটপেও এই ফিচার আছে )।
পারফরম্যান্স এর কথা বললে এটাকে এই বাজেটে ভালোর কাতারেই ফল যায়। আপনি ক্রমে অনেকগুলো ট্যাব ওপেন করতে পারবেন এবং তার পাশাপশি স্পটিফাই তে মিউজিক শুনতে পারবেন হালকা ফ্রেম ড্রপে। এছাড়া SSD থাকায় অ্যাপ অনেক দ্রুত ওপেন হবে।
এতে রয়েছে ইনটেল এর ৮ম জেনারেশন এর Core i3 প্রসেসর এবং ৪ জিবি মেমোরি। এর ব্যাটারি ব্যাকআপ অসামান্য প্রায় ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত আপনি নরমাল সব কাজ যেমন: ব্রাউজিং, ইউটিউবে ভিডিও দেখা ইত্যাদি করতে পারবেন।
তবে এতেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেমন: গ্রাফিক্স পারফরম্যান্স ভালো নয়। Aspire 5 ল্যাপটপটি বর্তমান কিংবা পূর্বের যেকোনো হাই এন্ড গেম খেলতে পারবে না লো সেটিংসেও। তবে দাম অনুসারে এই সব উপেক্ষা করা যায়।
যদি আপনি একটি স্টাইলিশ এবং ধরতে আরামদায়ক ল্যাপটপ চান তাহলে আপনি এই ল্যাপটপটির কথা ভাবতে পারেন। ৫০ হাজার টাকার মধ্যে একটি অসাধারণ ল্যাপটপ এটি। এতে রয়েছে ১৫.৬-ইঞ্চি এর বড়ো ডিসপ্লে যেটা ফুল এইচডি রেজোলিউশনলভ্য।
এতে থাকছে একটি আল্ট্রা থিন, ৫.৭-মিলিমিটার বেজেল সম্পন্ন ডিসপ্লে যেটার এক্সপেরিয়েন্স অসাধারণ। ৩.৫-ডিগ্ৰি টিল্ট থাকায় এলিভেটেড এরগো লিফট হিঞ্জ ল্যাপটপটির ভেতর বাতাস প্রবাহ বাড়ায় যাতে ল্যাপটপটি ঠান্ডা থাকে এবং টাইপ করা সহজ করে দেয়।
এই লিস্ট এর অন্যান্য ল্যাপটপ এর মত Asus Vivobook 15 এর পারফরম্যান্সও ভালো। পর্যাপ্ত গতি আছে এতে ইউটিউব দেখা, ওয়ার্ড প্রসেস করা কিংবা ব্রাউজিং করার জন্য। কিন্তু এতো শক্তি নেই যে নতুন ও আধুনিক গেম চালাতে পারবে।
আপনি এতে আরো পাচ্ছেন টাইপ সি পোর্ট, ইউএসবি ৩.১ টাইপ এ, ইউএসবি ২.০, এইচডিএমআই পোর্ট, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এবং ব্যাকলাইট সম্পন্ন কীবোর্ড। ল্যাপটপটি ধরা খেয়ে যাই এর চলার মত ডিসপ্লে এর কারণে এবং প্রচুর ব্লোটওয়্যার দিয়েভরা।
যদি আপনি সেরা ক্রোমবুক সন্ধান করে থাকেন তাহলে আপনি এই ল্যাপটপ এর কথা ভাবতে পারেন। এতে আছে একটি ব্রাইট ডিসপ্লে যার ব্রাইটনেস ২৫৯ নিটস পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে ডিসপ্লেটি এইচডি রেজোলিউশন সম্পন্ন। তাই একটু কম্প্রোমাইজ করতে হবে।
এতে থাকছে ৪জিবি মেমোরি এবং সেই সাথে থাকছে ইনটেল এর সেলেরন প্রসেসর যার দরুন আপনি একাধিক ক্রম ট্যাব ওপেন করতে পারবেন এবং পাশাপশি গানও শুনতে পারবেন। আর এর ব্যাটারি লাইফ ১০ ঘন্টার নাগাদ প্রায়।
তাছাড়া ক্রমবুকটিতে থাকছে একটা স্ট্যান্ড আউট ওয়েব ক্যাম যেটা ইনস্টাগ্রাম এর ফিল্টার সম্পন্ন, ব্যাবহার করা যাবে লাইভ চ্যাট এবং মাল্টি শট এর জন্য। অন্যান্য ক্রোমবুকের ন্যায় এটিও চলে Chrome OS অপারেটিং সিস্টেমের উপর এবং দিবে ৩২জিবি ফ্ল্যাশ স্টোরেজ।
এর খুঁতগুলো দাম অনুসারে উপেক্ষা করা গেলেও কিছু কথা বলতে হয় যেমন এর অধিক ব্যাবহার করার পর এটি প্রচুর গরম হয়। এমনকি আপনার চা বা কফি গরম করতে পারে! মজা করছি আপনাকে একটু গরম সহ্য করে হবে।
তবে ক্রোমবুক এর কথা ভাবলে এটি খুব খারাপ নয় অন্তত এই দামে।
আপনার যদি এমন এক ল্যাপটপ প্রয়জন হয় যেটা আপনি সহজেই বহন করতে পারবেন এবং যেটার উজন খুবই হালকা তাহলে আপনি এই ল্যাপটপ প্লাস টেবলেট এর কথা চিন্তা করতে পারেন। এর ওজন মাত্র ১.১৫ পাউন্ড। এর থেকে বেশী পর্টাবল ল্যাপটপ পাবেন না।
তবে হতাশার কথা হলো অন্যান্য সার্ফেস প্রোডাক্ট এর মত এর জন্যও আপনাকে আলাদা করে খরচ করে কীবোর্ড এবং পেন কিনতে হবে। তবে শুধু কীবোর্ড কিনলে বোধ এর দাম ৫০ হাজার এর মধ্যে থাকবে। মেমোরি এবং বেশি স্টোরেজ এর সাথে এর দাম বাড়বে।
তবুও Surface Go একটি প্রিমিয়াম ল্যাপটপ, এর ডিসপ্লে অনেক কালারফুল এবং এই লিস্ট এর ডিসপ্লে বেস্ট। এছাড়া এর বিল্ড কোয়ালিটি অনেক ভালো ও মজবুত পাশাপাশি এতে আছে একটি কিকস্টান্ড ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট মোড এ সুইচ করার জন্য।
থাকছে ব্যাকলাইট সম্পন্ন কীবোর্ড এবং ইনটেল এর পেন্টিয়াম গোল্ড সিপিইউ যেটা ভালো স্পীড প্রদান করে এবং ৪ কিংবা ৮ জিবি মেমোরি থাকায় ভালো কাজ করে। তবে এর ব্যাটারি লাইফ অনেক ভালো না মাত্র ৬ ঘন্টার কাছাকাছি যায়। তাই চার্জার কাছেই রাখবেন।
এই ল্যাপটপ বায়িং গাইডে থাকছে আরেকটি Acer এর ল্যাপটপ। Acer Swift 1 একটি হালকা ওজনের ল্যাপটপ এবং এতে এই প্রাইসের জন্য খুব ভালো ফিচারস রয়েছে। আপনি এতে পাচ্ছেন একটি শক্ত অ্যালুমিনিয়াম এর চাসিস। এবং থাকছে অনেক পোর্ট ( টাইপ সি, ইউএসবি ৩.০, ইউএসবি ২.০, এইচডিএমআই)
এই ল্যাপটপটির ওয়েব ক্যাম এই লিস্টের ল্যাপটপগুলির মধ্যে সবচেয়ে শার্প। এছাড়া এর ব্যাটারি লাইফ অসাধারণ। পুরো ১০ ঘন্টার মত ব্যাকআপ পাবেন অফিসের কাজ করার জন্য কিংবা ইউটিউবে, টুইচে স্ট্রিম করার জন্য কিংবা ব্রাউজিং করার জন্য। কিন্তু এর ডিসপ্লে কোয়ালিটি ভালো না। কালার গুলো ফ্যাকাশে লাগে।
অন্যান্য বাজেট ল্যাপটপ গুলোর সদৃশ এইটার মধ্যেও দা উইচার ৩ বা পাবজী বা রেড ডেড রেডেমশন ২ এটা তে চলবে না। আপনিও খেলার কথা ভাববেন না। তারপরও এর আশ্চর্যজনক ব্যাটারি লাইফ, সুন্দর ওয়েবক্যাম এবং ভালো পারফরম্যান্স Acer Swift 1 কে এই প্রাইসের সবচেয়ে সেরা, দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ সম্পন্ন ল্যাপটপ গুলোর একটি বানিয়ে তুলে।
টু-ইন-ওয়ান ল্যাপটপের কথা বললে আপনি HP Pavilion X360 এর কথা চিন্তা করতে পারেন যেটা আপনি ব্যাবহার করতে পারবেন একটা টাচ স্ক্রিন ওয়ালা ট্যাবলেটের মত বা সম্পূর্ণ কার্যরত ল্যাপটপ এর ন্যায়। যখন আপনার ইচ্ছা হবে তখনই আপনি টাচ স্ক্রীন ছেড়ে সুন্দর, মসৃণ কিবোর্ডটি টাইপ করতে পারবেন।
কীবোর্ডটির ট্রাভেল চমৎকার। আরো যোগ করুন সামনের দিকে মুখ করা ব্যাং এবং অলুফসেন স্পিকার যুগল যেটা কিনা হতে পারে আপনার নিজের সাউন্ড বক্স। এর আওয়াজ অনেক বেশি এবং এই প্রাইসের ল্যাপটপের স্পিকার অনুযায়ী অসামান্য। আসলেই এর সাউন্ড বাজেট ল্যাপটপ দের মধ্যে অস্থির।
HP Pavilion X360 এর পারফরম্যান্সও বেশ ভালোই, আপনি একাধিক ব্রাউজার ট্যাব খুলতে পারবেন পাশাপশি মাহফুজুর রহমানের গানও শুনতে পারবেন। কিন্তু হেভী গেমিং করা যাবে না। আবার এর ব্যাটারি লাইফেও কিন্তু অনেক অস্থির কিছু না ৬ ঘন্টার মত ব্যাকআপ পাবেন যা লিস্টের অন্যান্যদের থেকে কম।
এছাড়া এর চলার মত ডিসপ্লে খুব বেশি কালারফুল ছবি শো করে না এবং সূর্যের আলোয় ব্যাবহার করা যাবে না এর ব্রাইটনেস কম। তারপরও যদি আপনি একটি ল্যাপটপ চান যেখানে কিছুক্ষন লেখাপড়া করবেন এবং মুভিজ, শোজ উপভোগ করবেন আর এক অসাধারণ স্পিকার দিয়ে মাথার বারোটা বাজবে তাহলে এই ল্যাপটপটা খুবই উৎকৃষ্ট।
মিডিয়াটেক এর চিপ ধারি এই ক্রোমবুকটিতে থাকছে ৪ জিবি মেমোরি এবং গুগল ক্রোম এর অপারেটিং সিস্টেম। তাই এতে আপনি অনেক বেশি ট্যাব খুলতে পারবেন না এবং নিঃসন্দেহে ডিমান্ডিং গেম তো খেলতেই পারবেন না এর গ্রাফিক্স চিপে।
কিন্তু আপনি হালকা পাতলা কাজ করতে পারবেন এবং ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারবেন যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যান্য ট্যাব খুলা না থাকে যদিও এর লো রেজোলিউশন এর ডিসপ্লেতে অসাধারণ কালারের ভিডিও খুব ভালো দেখাবে না। কিন্তু এর ব্যাটারি লাইফ অস্থির। ১০ ঘণ্টা!
এই লিস্টের খুব কম ল্যাপটপই ১০ ঘন্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রদান করে। এছাড়া এর কীবোর্ড এ ক্লিক করার অভিজ্ঞতা ভালো এবং কী গুলো দুর্বল নয় যে উঠে যাবে বা এই ক্রোমবুকটি হেলে দুলে যাবে না।
কলেজ স্টুডেন্টস এবং বাচ্চাদের জন্য যারা কালার অ্যাকুরেসি নিয়ে চিন্তা করে না শুধু মাত্র নিজেদের অ্যাসাইনমেন্ট করতে চায় সময়ে তাদের জন্য এই ল্যাপটপটি খুবই ভালো একটি পিক। তবে এর এইচডিএমআই পোর্ট ব্যাবহার করে একটা আলাদা মনিটর তো লাগানো যাবেই।
যখনই আপনি ৫০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা ল্যাপটপ এর কথা ভাববেন তখন আপনাকে কিছু জিনিষ মাথায় রাখতে হবে। নিম্নে কিছু টিপস দিলাম যার দ্বারা আপনি নিজের জন্য আদর্শ ল্যাপটপ কিনতে পারবেন।
ক্রোমবুক না উইন্ডোজ: ৫০ বা ৩০ হাজার এর মধ্যে থাকা ল্যাপটপগুলো এর মধ্যে সাধারণত থাকবে উইন্ডোজ বা ক্রোম ওএস। ক্রোম ওএস একটা হালকা পাতলা সিস্টেম যেটা ওয়েব-ভিত্তিক গুগল সার্ভিস দ্বারা চলে যেমন: ক্রোম, জি মেইল, গুগল ডকস এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও সাপোর্ট করে।
নরমাল কাজের জন্য ক্রোম ওএস চলবে কিন্তু আপনি যদি আরো বেশি অ্যাপস ইন্সটল করতে চান তাহলে আপনি উইন্ডোজ ১০ সম্পন্ন ল্যাপটপ ব্যাবহার করতে পারেন।
এই প্রাইস ব্র্যাকেট অ্যাপলের ম্যাক বুক পাওয়ার কথা ভুলে যান। সবচেয়ে কম দামি ম্যাক বুক ১ লক্ষ্য টাকার উপরে টাকা নিবে।
ক্ল্যামশেল না কনভার্টেবল: বেশিরভাগ ৫০ হাজারের ল্যাপটপ গুলো দুটো ফরম ফ্যাক্টরে আসে একটা নরমাল ল্যাপটপের মত আরেকটা কনভার্টেবল যেটা ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপ দুই এর মতই ব্যাবহার করা যাবে।
এই দুই প্রকৃতির মধ্যে ক্ল্যামশেল গুলোর দাম কম, নরমাল ল্যাপটপের অভিজ্ঞতা দেয় একটা কীবোর্ডের সহিত কিন্তু কোনো টাচ স্ক্রীন দেয় না।
কিন্তু আপনি যদি এমন এক ডিভাইস চান যেখানে টাচ স্ক্রিন আছে এবং একটা ট্যাবলেট রূপেও ব্যাবহার করতে পারবেন তাহলে আপনি Surface Go এর মত ল্যাপটপ দেখতে পারেন।
১০৮০ পিক্সেল এর ল্যাপটপ বাছুন: এমন যদি না হয় যে হাতে মোটেই টাকা না থাকে তাহলে আপনি ১০৮০পি ডিসপ্লে বাছাই করুন। বেশির ভাগ নোটবুক গুলোই শুরু হয় ১০৮০ পিক্সেলের ডিসপ্লে সহিত । তাই হাতে টাকা একে বারে না থাকলে ১০৮০পি ছেড়ে দিতে পারেন। এমনিভাবে ১০৮০পি ছাড়া কিনতে বিরত থাকুন।
মতামত
আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেল টি পছন্দ করেন তাহলে ছড়িয়ে দিন সবার কাছে আর আপনার কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে জানান। ধন্যবাদ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমরা স্প্যাম ঘৃণা করি!